চাঁদপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের জনগণকে উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে, প্রয়াত সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের নামে একটি ভাসমান হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। এই হাসপাতালটি বর্তমানে স্থানীয় মানুষের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
বুধবার, ভাসমান হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কিং আবদুল্লাহ হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সোলায়মান আবদুল আজিজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফর, ফ্রেন্ডশিপ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবদুর রকিবসহ অন্যান্য ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা।
ফ্রেন্ডশিপ, একটি বেসরকারি সংস্থা, এই ভাসমান হাসপাতালটির কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করছে। রুনা খান জানান, সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের নামে বাংলাদেশে পাঁচটি ভাসমান হাসপাতাল কার্যক্রম চালু করা হবে। চাঁদপুরে এই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানুয়ারি মাস থেকে এবং এটি পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুর ও ভোলায় যাবে, তারপর আবার চাঁদপুরে ফিরে আসবে।
ভাসমান হাসপাতালটি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের মেঘনা নদীর চরে অবস্থান করছে। এখানে তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ জন স্বাস্থ্যসেবাকর্মী রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করছেন। হাসপাতালের এক কক্ষে চোখের ছানি অপারেশন এবং লেন্স লাগানোর কাজ হচ্ছে, অন্য কক্ষে দাঁতের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য কক্ষে রোগীদের চিকিৎসা চলতে থাকে এবং পাশের ল্যাবে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষাও করা হয়। রোগীদের সকল চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে।
চাঁদপুরের স্থানীয় কৃষক আবদুল মোতালেব খালাসি বলেন, “এখানে এমন একটি হাসপাতাল চালু হওয়ায় আমাদের এলাকার মানুষ এখন উন্নত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে, যা আগে সম্ভব ছিল না।”
হাসপাতালের চিকিৎসক সুমিত কুমার সাহা জানান, “আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা করছি এবং রোগীদের বিনামূল্যে অপারেশন এবং ওষুধ সরবরাহ করছি।”
এই ভাসমান হাসপাতালে আজ একদিনে ১০০ জন রোগীর চোখের অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছে এবং তাদের ওষুধ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০০ জনকে অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “এই ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের মাধ্যমে চাঁদপুরের চরাঞ্চলের মানুষ গত তিন মাস ধরে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব যাতে ভবিষ্যতে আরও বেশি সেবা প্রদান করা যায়, বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।”
এভাবে, সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের নামাঙ্কিত এই ভাসমান হাসপাতাল, চাঁদপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।